আমাদের কথা

আমাদের কথা
মামুনুর রশিদ চৌধুরী জামালপুর সদর উপজেলায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স - মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেন। ২০১৪ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনে যোগদান করেন। ২০২১ সালে প্রমোশন পেয়ে উপ পরিচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি উপপরিচালক হিসেবে কমিশন সমন্বিত এলাকার পটুয়াখালীতে কর্মরত আছেন। কর্মকালীন সময়ে ভারত এবং থাইল্যান্ডের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।বাংলাদেশের বহুল আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারি মামলা, পি কে হালদার এর মামলা, গোল্ডেন মনিরের মামলা, এনামুল হক এন ও কাউন্সিলর রাজিব এর মামলা আলোচিত পাসপোর্ট এর মামলা সহ তিনি জাতীয়ভাবে আলোচিত অনেক মামলা করেছেন।
দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে দুর্নীতি নেই । মানব সভ্যতা বিকাশে এবং উন্নয়নে দুর্নীতি প্রধান অন্তরায়। সমাজের সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা সৃষ্টি এবং সম্পদের অপ্রতুলতা থেকেই দুর্নীতির ব্যাপকতা। অধিকাংশ অপরাধের অন্যতম উৎস হচ্ছে দুর্নীতি।
দুর্নীতি মানব সভ্যতার প্রাচীনতম অপরাধগুলোর মধ্যে একটি ।পৃথিবীর প্রাচীনতম এই অপরাধের জন্য অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকারের দুর্নীতির বিশদ বিবরণ রয়েছে। তবে এ দণ্ডবিধি প্রচলিত হওয়ার পূর্বেও এ দেশে এ জাতীয় অপরাধের দণ্ডের বিধান ছিল। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, দণ্ডবিধি ১৮৬০ প্রণয়নের মাধ্যমে দুর্নীতিসংক্রান্ত অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার আইনগত কাঠামো সৃষ্টি হয়।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৪ সনে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণকর্মচারীদের দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সনে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ প্রণয়ন ও বলবৎ করা হয়। দুর্নীতি দমনে জারিকৃত এ আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পুলিশ বিভাগের ওপর। এতে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জিত না হওয়ায় দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে একটি পৃথক সরকারি দপ্তর তথা “দুর্নীতি দমন ব্যুরো” গঠনসহ অন্যান্য লক্ষ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন আইন, ১৯৫৭ বলবৎ করা হয়। প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী দপ্তর হিসেবে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করলেও ১৯৬৭ সন থেকে একটি স্থায়ী দপ্তরে পূর্ণোদ্যমে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর স্বাধীনভাবে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করার আইনি সুযোগ ছিল না। একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর জরিপে বাংলাদেশ একাধিকবার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে দেশের সাধারণ মানুষ, উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সনের ২১শে নভেম্বর "বাংলাদেশ ব্যুরো অব এন্টিকরাপশন” বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন একটি জাতীয় সংবিধিবন্ধ সংস্থা, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। দুর্নীতি দমন কমিশন শিক্ষা, প্রতিরোধ এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রাম অর্থাৎ দুদক যে উদ্দেশ্যকল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; সমাজের হোয়াইট কালার ক্রিমিনালদের আইনের আওতায় আনার জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

আমার এই কার্যক্রমে আমার পূর্বের কিছু কাজের কিছু মডেল এফআইআর, চার্জশিট ও অন্যান্য কার্যক্রম স্থান পেয়েছে। এছাড়াও, ১০০ টি সাজাপ্রাপ্ত মামলার রায়ের বিশ্লেষণ, ১০০টি খালাসপ্রাপ্ত মামলার রায়ের বিশ্লেষণ, দুদকের যে সকল মামলার রায় ডিএলআর-এ স্থান পেয়েছে সে সকল রায় এবং অনুসন্ধান এবং তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র অফিসারদের এক্সেস রয়েছে আমার কার্যক্রম গুলোতে সাধারণ পাবলিক বা অন্য কারো এক্সেস নাই। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের জন্য আলাপ আলোচনা বা সাজেশন এর জন্য একটি ব্যবস্থা রয়েছে। আশা করি জুনিয়র কর্মকর্তারা এর দ্বারা উপকৃত হবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী দুর্নীতি এবং অন্যান্য সুনির্দিষ্ট অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করা দুদকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। দুদকের অনুসন্ধান এবং তদন্তের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, বিষয়বস্তুর গভীর অনুধাবন, বিষয়বস্তুর গভীর অনুধাবন এবং প্রায়োগিক নির্দেশনার জন্য আমার এই ছোট প্রচেষ্টা। বিশেষ করে ২০২২ সালে যোগদানকৃত নবীন এডি এবং ডিএডি এবং অন্যান্য জুনিয়র কর্মকর্তাদের জন্য আশা করি আমার এই প্রয়াস সহায়ক হবে। তদন্ত কার্যক্রম অত্যন্ত সুচারু ভাবে বিচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপনের লক্ষ্যে বস্তুগত সাক্ষ্য, বিশেষজ্ঞ মতামত, প্রায়োগিক যুক্তিনির্ভর তথ্য উপস্থাপন এবং আইনবিধি এবং অন্যান্য নির্দেশনাগুলো ফলপ্রসূভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।