হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ, হেরে যাওয়া সংস্কৃতি

August 30, 2023

Category: সাজা(হাইকোর্ট)



বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরাজয় ঘটেছে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। অর্ধ শতাব্দীর বহুবিধ অর্জনের মধ্যে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে বিপুল বিসর্জন ঘটেছে, যে সুশ্রী ও সৌকর্যের অপচয় ঘটেছে তা আজকের বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ অচেনা করে তুলেছে। আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে হাজার বছরের বাঙালিত্বকে, তার আত্মপরিচয় বিনির্মাণের ধারাবাহিকতা চোখে পড়ে না, বরং তার ওপর আরোপিত এক অদ্ভুতুড়ে বাংলাদেশ, যে কি না সর্বক্ষণ রেগে থাকে, দাঁত নখর বের করে রাখে, অন্যকে আক্রমণ করার জন্য শানিয়ে রাখে গোপন অস্ত্র। সম্প্রীতির বহুবচনতা তার কাছে মূল্যহীন, ধর্ম অবমাননা নামীয় এক অপ ও কূটকৌশলের প্রয়োগে সে দিনকে দিন অতীব-পারঙ্গম হয়ে উঠছে। অর্বাচীন কারণে জ্বালিয়ে দিচ্ছে বসত বাড়ি, ভয়ের কারুকাজ বিনির্মাণে দিন দিন হয়ে উঠছে কুশলী।

 

এই বাংলাদেশ আমার অচেনা।

আগে বাংলাদেশ বহু মানুষের দেশ ছিল; বহু রকম মানুষের প্রাণের কাছে ছিল স্বাধীন সার্বভৌম একটি মমতাময় দেশ। সে দেশটা বহু ধর্মের, অথবা একই ধর্মের বহুধা বিভক্ত গোত্রের, বহু মতবাদ ও মতাদর্শের অনুসারী মানুষকে আশ্রয় দিত, সুন্নি, শিয়া, আহমদিয়াকে যেমন আশ্রয় দিত, তেমনি আশ্রয় দিত শাক্ত বৈষ্ণব বাউলদেরকে। বৃহৎ বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে সংখ্যার বিচার দিয়ে মূল্যবান বা ঊনমূল্য করে তুলত না। সে দেশে মুক্ত চিন্তাকে বাংলা একাডেমি থেকে ফেরার পথে গলায় ছুড়ি বসিয়ে বা দা’য়ে কুপিয়ে খতম করে দেবার চল ছিল না; ভিন্নমতের সঙ্গে শ্রদ্ধাপূর্ণভাবে দ্বিমত পোষণ করারও রেওয়াজ ছিল। ধর্ম তাদেরকে কুঠুরিবদ্ধ করে অন্যকে আঘাতের জন্য অস্ত্রে শান দিতে শেখাতো না। কাউকে কুঠারাঘাত করে ফিরে এলে সাদরে বরণ করার রীতি ছিল না, অথবা মৃত্যুদাতা হতে গিয়ে মৃত্যুমুখে পড়লে সরাসরি বেহেশতে পৌঁছে হুরীদের সঙ্গে আদর-সোহাগে জীবন কাটাতে পারবে, এমন নিশ্চিত সংবাদ প্রচারের রীতিও ছিল না। দেশের অধিকাংশ মানুষ বিজ্ঞান ও মুক্তচিন্তাকে যেমন সমাদর করতো, তেমনি ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, নিজেকে ও দেশকে এগিয়ে নেবার শপথে অবিচল থাকত। বহুজনের আত্মত্যাগে, বহুমানুষের জ্ঞানে প্রজ্ঞায়, অবদানে গড়ে ওঠা চিরচেনা সর্বজনের বাংলাদেশের সঙ্গে ধর্মনির্বিশেষে সকলের আত্মিক সম্পর্ক ঠিক সেভাবেই গড়ে উঠেছিল।





আরো ব্লগ